Thursday, June 6, 2019

একটুর জন্য পারল না বাংলাদেশ

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জেতা বাংলাদেশ হেরে গেছে দ্বিতীয় ম্যাচে। ২ উইকেটের জয়ে নিউ জিল্যান্ড পেয়েছে টানা দ্বিতীয় জয়।
ওভালে মঙ্গলবার বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ২৪৪ রানে। মাঝারি সেই রানেও ম্যাচ জমল তুমুল। শেষ দিকে ম্যাচের লাগাম হাতবদল হলো কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কিউইদের।
বাংলাদেশের একটু করে আক্ষেপের শুরু ম্যাচের শুরু থেকেই। তবে সব ছাপিয়ে গেছে মুশফিকুর রহিমের দুটি সুযোগ হাতছাড়া। একটি রান আউটের, যেটিতে গড়বড় করেছেন স্টাম্পের আগে থেকে বল ধরতে গিয়ে। আরেকটি স্টাম্পিংয়ের, যেটিতে দেখা গেল না তেমন কিছু করার চেষ্টাও। প্রথম ব্যাটসম্যানের নাম কেন উইলিয়ামসন, পরের জন রস টেইলর।
মুশফিক পরে দারুণ দুটি ক্যাচ নিয়ে ভূমিকা রেখেছেন ম্যাচ জমিয়ে তুলতে। তাতে আগের ভুল দুটি নিয়ে আফসোস বেড়েছে আরও। যথাক্রমে ৭ ও ৯ রানে বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসন ও টেইলরের শতরানের জুটিই যে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছে কিউইদের!
এই ম্যাচের আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেইলরের ব্যাটিং গড় ছিল ৫৭। প্রিয় প্রতিপক্ষকে আরেকবার যন্ত্রণা দিয়ে ৮২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানই।
অথচ অনায়াসেই ম্যাচের সেরা হতে পারতেন সাকিব আল হাসান। বেশিরভাগ সতীর্থের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের দিনেও যথারীতি উজ্জ্বল বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার। তিনে ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকে ছুটতে থাকা ব্যাটিং ধারাবাহিকতার রথ সচল এ দিনও। করেছেন দলের একমাত্র ফিফটি। বল হাতে তার দুই উইকেটেই বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার শুরু। ক্যারিয়ারের দুইশতম ওয়ানডেতে এমন পারফরম্যান্সের পরও তাকে থাকতে হচ্ছে হেরে যাওয়া দলে।
গোটা ইনিংসে একটি কেবল ফিফটি, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র তুলে ধরছে এটিই। ছয় জন ব্যাটসম্যান ২০ ছুঁলেও আর কেউ করতে পারেননি এমনকি ৩০ রানও। পাঁচটি ২০ ছোঁয়া জুটির একটিও ছাড়াতে পারেনি পঞ্চাশ। দলের রান আড়াইশর নীচে থেমেছে এই কারণেই।
শুরুটা যদিও ছিল আশা জাগানিয়া। ঘাসের ছোঁয়া থাকা নতুন উইকেটে দুই অধিনায়কেরই চাওয়া ছিল আগে বোলিং। সেই চাওয়া পূরণ হয় উইলিয়ামসনের। কিউই পেসারদের বোলিংও ছিল ভালো। আঁটসাঁট লাইন-লেংথের পাশাপাশি আচমকা ছোবল দিয়েছে শর্ট বল।
সে সব সামলেই দলকে এগিয়ে নেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। সাবধানী শুরুর পর দারুণ কিছু শটে ৮ ওভারে দুজন তোলেন ৪৪ রান।
কিন্তু দুজনই উইকেট বিলিয়ে আসেন নিজেদের ভুলে। ২৫ বলে ২৫ করে সৌম্য বোল্ড ম্যাট হেনরির সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলে। থিতু হয়ে গেলেও তামিম ২৪ রানে বিদায় নেন লকি ফার্গুসনের ১৪৪ কিলোমিটার গতির বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে।
তখনও ঠিক চাপে পড়েনি বাংলাদেশ। সাকিব ও মুশফিক দলকে টেনেছেন স্বচ্ছন্দেই। আগের ম্যাচে ১৪২ রানের জুটি গড়া এই দুজনের জুটি আবারও আশা দেখাচ্ছিল দলকে। কিন্তু এবার আশাভঙ্গ রান আউটে। দ্রুত রানের চেষ্টায় ছুটতে গিয়ে ড্রেসিং রুমে ছুটতে হলো মুশফিককে।
এরপর কেবল আক্ষেপের তালিকাই দীর্ঘ হয়েছে। অনায়াসে এগোতে থাকা সাকিব মূহুর্তের অমনোযোগিতায় আউট হয়েছেন ৬৮ বলে ৬৪ করে। দুর্দান্ত খেলতে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন ২৬ রানে ফিরেছেন ভুল শট নির্বাচনে।
৩০ ওভার শেষে দলের রান ছিল ৩ উইকেটে ১৫১। ২৮০ বা ৩০০ রানের হাতছানি ছিল তখনও। কিন্তু পরের ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে আসে কেবল ৩৭ রান। ছন্দ, গতি, সবই হারায় এই সময়ে।
মাহমুদউল্লাহ ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। শেষ দিকের জন্য দলের সেরা ব্যাটসম্যান হলেও এই ম্যাচে পারেননি বড় শট খেলতে, ধুঁকেছেন সিঙ্গেল নিতেও। থেমেছেন ৪১ বলে ২০ করে। মোসাদ্দেক হোসেনও পারেননি শেষের দাবি মেটাতে।
আটে নেমে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস দলকে নিয়ে গেছে আড়াইশর কাছে। পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করে দেওয়া হেনরি ক্যারিয়ারে সপ্তমবার পেয়েছেন ৪ উইকেট।
ওই পুঁজিতে জিততে বাংলাদেশের জরুরি ছিল দ্রুত উইকেট। উল্টো নিউ জিল্যান্ড পায় দ্রুত শুরু। মার্টিন গাপটিল ও কলিন মানরো ৫ ওভারে তোলেন ৩৫ রান।
ত্রাতা হয়ে আসেন সেই সাকিব। বল হাতে নিয়ে প্রথম ডেলিভারিতেই ফেরান ১৪ বলে ২৫ রান করা গাপটিলকে। পরে বিপজ্জনক মানরোকে ২৪ রানে থামান সাকিবই, মিড উইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন মিরাজ।
এর পরপরই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া সেই দুটি মুহূর্ত। মুশফিকের সুযোগ হাতছাড়ায় উইলিয়ামসন ও টেইলরের টিকে যাওয়া। দুজন মিলে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিতে থাকেন বাংলাদেশকে।
লাগাম যখন পুরোই কিউইদের হাতে, এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ফেরান মিরাজ। উইলিয়ামসন ফেরেন ৪০ রানে, টম ল্যাথাম পাননি রানের দেখা।
লড়াই জমে ওঠে সেখান থেকেই। কিউইদের ব্যাটে রান এসেছে, বাংলাদেশও উইকেট নিয়েছে। মূল বাঁধা হয়ে থাকা টেইলরকে সরান মোসাদ্দেক। সাইফের বলে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচ থামায় কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে। মাশরাফি মুর্তজার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং পরিবর্তন কাজে লাগে জিমি নিশামকে ফেরাতে, বোলার সেই মোসাদ্দেক।
তবে বোলিংয়ে আরও একটি বাজে দিন গেছে মাশরাফির। এই নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক উইকেটশূন্য থাকলেন টানা চার ওয়ানডে। আগের ম্যাচের অন্যতম নায়ক মুস্তাফিজুর রহমানও এ দিন খেই হারালেন বারবার। এই দুজনের বোলিংয়ের ঘাটতিটুকু শেষ পর্যন্ত পুষিয়ে ওঠা গেল না। মুস্তাফিজের বলে মিচেল স্যান্টনারের বাউন্ডারিতে ম্যাচের ইতি। স্বস্তি কিউইদের ড্রেসিং রুমে। বাংলাদেশের প্রাপ্তি, অনেক ভুলের পরও একটুর জন্য হার!  
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ (তামিম ২৪, সৌম্য ২৫, সাকিব ৬৪, মুশফিক ১৯, মিঠুন ২৬, মাহমুদউল্লাহ ২০, মোসাদ্দেক ১১, সাইফ ২৯, মিরাজ ৮, মাশরাফি ১, মুস্তাফিজ ০*; হেনরি ৯.২-০-৪৭-৪, বোল্ট ১০-০-৪৪-২, ফার্গুসন ১০-০-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮-০-৩৯-১, নিশাম ২-০-২৪-০, স্যান্টনার ১০-১-৪১-১)
 
নিউ জিল্যান্ড: ৪৭.১ ওভারে ২৪৮/৮ (গাপটিল ২৫, মানরো ২৪, উইলিয়ামসন ৪০, টেইলর ৮২, ল্যাথাম ০, নিশাম ২৫, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৫, স্যান্টনার ১৭*, হেনরি ৬, ফার্গুসন ৪*; মাশরাফি ৫-০-৩২-০, মিরাজ ১০-০-৪৭-২, মুস্তাফিজ ৭.১-০-৪৮-০, সাকিব ১০-০-৪৭-২, সাইফ ৭-০-৪১-২, মোসাদ্দেক ৮-০-৩৩-২)
 
ফল: নিউ জিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী
 
ম্যান অব দা ম্যাচ: রস টেইলর

SHARE THIS

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 Please Share a Your Opinion.: